,

কাশিয়ানীতে বিনাধান-১৬ উৎপাদনে দেশের সর্বোচ্চ রেকর্ড

কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি: গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত নতুন জাতের স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন বিনাধান-১৬ আমন মৌসুমে উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়েছে। যা দেশের সর্বোচ্চ রেকর্ড বলে দাবি গোপালগঞ্জ বিনা’র।

প্রতি হেক্টরে এ জাতের ধান ৭.২২ মেট্রিক টন ফলেছে বলে কাশিয়ানী উপজেলার পশ্চিম মাঝিগাতি গ্রামের কৃষক হুমায়ূন খন্দকারের জমিতে উৎপাদিত বিনাধান-১৬ কেটে পরিমাপ করে এ তথ্য জানানো হয়। ঘুর্নিঝড় বুলবুল এ ধানের কোন ক্ষতি করতে পারেনি বলে প্রত্যাশিত ফলন পাওয়া গেছে ।

গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্র জানিয়েছে, এ বছর এ কেন্দ্রের তত্তা¡বধানে এ ধানের আবাদ করা হয়েছে। স্বল্প মেয়াদকাল সম্পন্ন এ জাতের ধান রোপনের ১শ’ দিনের মাথায় কাটা হয়েছে। এসব প্রদর্শনী প্লটের ধান কেটে পরিমাপ করে প্রতি হেক্টরে এ ধান ৭.২২ টন ফলন পাওয়া গেছে। আমন মৌসুমে প্রচলিত জাতের তুলনায় এটি সবচেয়ে বেশি ফলন দিয়ে দেশে নতুন রেকর্ড করেছে। এর আগে এ ধান হেক্টরে ৬.৬৯ টন ফলেছে বলে ওই উপকেন্দ্র জানিয়েছে।

কাশিয়ানী উপজেলার পশ্চিম মাঝিগাতি গ্রামের কৃষক হুমায়ূন খোন্দকার বলেন, ‘এ বছর আমি বিনা ১৬ জাতের ধান আবাদ করেছি। প্রচলিত আমনের তুলনায় এ ধান রেকর্ড পরিমান ফলন দিয়েছে। এ ধান প্রচলিত আমনের ১ মাস আগে কাটা যায়। বাজারে ধানের দাম ভাল পাওয়া যায়। এ ধানের আবাদের পর সরিষা, কলাই বা মসুরের আবাদ করা যায়। আগে আমরা বছরে ২টি ফসল পেতাম। কিন্তু এ ধানের বদৌলতে একই জমিতে বছরে ৩ ফসল ফলিয়ে আমরা ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারছি। এতে আমাদের বেশি লাভ হচ্ছে।’

একই গ্রামের কৃষক খন্দকার সিদ্দিক বলেন, ‘প্রচলিত জাতের ধান চাষে লাভ নেই। স্থানীয় আমনে রোগবালাই দেখা দেয়। কিন্তু বিনাধান-১৬ জাতে কোন রোগবালাই নেই। কারেন্ট পোকা আক্রমণ করে না। তাই কীটনাশক খরচ লাগে না। বুলবুলের আঘাতে ধান হেলে পড়লেও একটি ধানও ঝড়ে পড়েনি। অধিক ফলন দেয়। এ জাত চাষ করে আমরা লাভের মুখ দেখেছি।’

কাশিয়ানী উপজেলার পশ্চিম মাঝিগাতী গ্রামের কৃষক রিজাউল খন্দকার বলেন, ‘ক্ষেতে উৎপাদিত ধান থেকেই এ ধানের বীজ পরবর্তী বছরের চাষাবাদের জন্য সংরক্ষণ করা যায়। এ ধানের চাল চিকন ও ভাত খেতে সুস্বাদু। এসব কারণে আমরা আমন মৌসুমে এখন থেকে বিনাধান-১৬ আবাদ করবো।’

কাশিয়ানী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা পীযুষ রায় বলেন, ‘দিন দিন দেশে কৃষি জমি কমছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিপুল সংখ্যক মানুষকে খ্যাদের যোগান দিতে অল্প জমিতে অধিক ফসল উৎপাদনের কোন বিকল্প নেই। স্বল্প সময়ে বিনাধান-১৬ অধিক ফলন দিয়ে সে কাজটিকে সহজ করে দিচ্ছে। এক ফসলী জমিকে দু’ ফসলী ও দু’ ফসলী জমিকে ৩ ফসলী জমিতে পরিনত করছে। এতে কৃষক অধিক ফসল উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন।

গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্রর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শেফাউর রহমান বলেন, লাভজনক শস্য বিন্যাস উদ্ভাবন কর্মসূচীর আওতায় গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে ও কৃষি সম্প্রসারণের সহযোগিতায় গোপালগঞ্জে বিনাধান-১৬ আবাদ করে কৃষক আমন মৌসুমে সব রেকর্ড ভঙ্গ করে হেক্টরে সর্বোচ্চ ৭.২২ টন ধান উৎপাদন করেছে । এটি দেশের সর্বোচ্চ ফলন। গত বছর এ ধান ৬.৬৯ টন ফলে ছিল। জলবায়ূ পরিবর্তনের ঝুঁকি সহিষ্ণু, পানি সাশ্রয়ী ও স্বল্প জীবনকালের এ ধান ক্ষেত থেকে কাটার পর কৃষক একই জমিতে আরো ২টি ফসল ফলাতে পারেন।

এই বিভাগের আরও খবর